হে মহাপ্রান লহ প্রনামঃ স্বামী বিবেকানন্দ জন্ম বার্ষিকী

হে মহাপ্রান লহ প্রনামঃ স্বামী বিবেকানন্দ জন্ম বার্ষিকী

ভারত মাতার পবিত্র ভূমিতে বহু বীর এবং মহান সন্তান জন্ম নিয়েছেন, এবং তাঁদের মধ্যে একজন হলেন স্বামী বিবেকানন্দ। তাঁর শৈশবের নাম ছিলো নরেন্দ্রনাথ দত্ত, ১২ জানুয়ারি ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে উত্তর কলকাতার দত্ত পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। 

তাঁর পিতার নাম ছিল বিশ্বনাথ দত্ত ও মাতা ভুবনেশ্বরী দেবী।

স্বামী বিবেকানন্দ” নামটি তাঁকে শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ দেব দিয়ে ছিলেন। 

স্বামী বিবেকানন্দের পিতৃপ্রদত্ত নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ কিন্তু তাকে ছোটবেলায় নরেন বা বিলে নামে বেশি ডাকা হতো।

১৮৭৯ সালে ১৬ বছর বয়সে কলকাতায় এসে নরেন সেই  সময়ে কলকাতার সবথেকে বিখ্যাত কলেজ প্রেসিডেন্সি কলেজ প্রবেশিকা পরীক্ষা দেন। এবং তিনি সেই পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয় এমনকি তিনি সেই বছর প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হওয়া একমাত্র ছাত্র ছিলেন। এই থেকেই আমার স্বামী বিবেকানন্দের পড়াশোনা প্রতি ভালোবাসা ও কৌতুহল সম্পর্কে জানতে পারি।এই কৌতূহল তাঁকে দর্শন, ধর্ম, ইতিহাস, সামাজিক বিজ্ঞান, সাহিত্য, বেদ, উপনিষদ, ভাগবত গীতা, রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ এবং অন্যান্য বিষয়গুলিরও এক মহান জ্ঞানী করে তুলেছিল।

নরেন্দ্রনাথ আমাদের ভারতীয় সংস্কৃতির সংগীতের ক্ষেত্রে শাস্ত্রীয় সংগীতের গভীর প্রশিক্ষণও পেয়েছিলেন। তিনি কেবল শিক্ষার ক্ষেত্রে আগ্রহী নন, তিনি নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন ও খেলাধুলায়ও অংশ নিতেন।

স্বামী বিবেকানন্দ একজন মেধাবী ছাত্রের সাথে সাথে বিভিন্ন ধর্মের প্রতি তার আগ্রহ ছিল কিন্তু তিনি তার যৌবনকালে স্নাতক পাস করার পর নাস্তিক বাদের দিকে ঝোঁক পড়তে থাকে।

সেই সময়েই ১৮৮১ সালে তিনি এক মহান আত্মা শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের সাথে প্রথম সাক্ষাৎ হয় যাকে তিনি পরবর্তীকালে তিনি নিজের গুরুর মর্যাদা দেন।

স্বামী বিবেকানন্দ শিকাগো শহরে অনুষ্ঠিত ধর্ম সম্মেলনে অংশ গ্রহণের পর থেকে  তিনি আন্তর্জাতিক স্তরে মান সম্মান ও খ্যাতি পান, সেই সময়কালে ভারতবর্ষের নাম উজ্জ্বল করেছেন।

এই ধর্মীয় সম্মেলনের মাধ্যমে স্বামী বিবেকানন্দ ভারতবর্ষের সংস্কৃতি, ভারতীয়দের বিশ্বাস ও ভারতীয় ভূমির গৌরবময় ইতিহাস সমগ্র বিশ্বের সামনে তুলে ধরেন।

স্বামী বিবেকানন্দ দেশে ফিরে আসার পর সর্বপ্রথম রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন এর প্রতিষ্ঠা করার জন্য উদ্যোগী হন।

স্বামী বিবেকানন্দের পাশ্চাত্যের বন্ধুরা ও শ্রী রামকৃষ্ণ দেবে ভক্তরা রামকৃষ্ণ মঠ প্রতিষ্ঠা করার জন্য স্বামীজি আর্থিক দিক থেকে সাহায্য করেন।

এরপর স্বামীজি ১৮৯৭ সালে ১ মে কলকাতায় ধর্ম প্রচার ও কর্ম যোগ করার জন্য রামকৃষ্ণ দেবের ভক্ত দের জন্য ” রামকৃষ্ণ মঠ” এর প্রতিষ্ঠা করেন।

এবং পরে এক বছরের মধ্যে ১৮৯৮ সালের ৯ই ডিসেম্বর সামাজিক কাজকর্ম ও মানুষদের সাহায্য করার উদ্দেশ্যে ” রামকৃষ্ণ মিশন” এর প্রতিষ্ঠা করেন।

স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৯৯ সালের মাসে পাশ্চাত্য ভ্রমনের উদেশে দ্বিতীয় বারের জন্য রওনা দেন।

স্বামীজী এই বার একা যাননি বরং তার সাথে সঙ্গী ছিলেন ভগিনী নিবেদিতা যিনি  স্বামীজীর শিষ্যাও। 

এরপর স্বামী বিবেকানন্দ তার পাশ্চাত্য ভ্রমণ সম্পূর্ণ করে ১৯০০ সালের ৯ই ডিসেম্বর তিনি আবার কলকাতায় বেলুড় মঠে ফিরে আসেন।

শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে স্বামী বিবেকানন্দের অবদান কারণে তার নাম ইতিহাসের পাতায় সুবর্ণ অক্ষরে লেখা রয়েছে।

স্বামী বিবেকানন্দ পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে ভ্রমনকালে সেখানকার শিক্ষা ব্যবস্থা ও স্ত্রী শিক্ষার প্রসার দেখে তিনি বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন।

সেই করেন তিনি দেশে ফিরে মানুষকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য উদ্যোগী হন। শিক্ষা নিয়ে স্বামীজি বলেছেন – “মানবের অন্তর্নিহিত পূর্ণতার বিকাশ সাধনই হল শিক্ষা।”

এটাতো সবথেকে বড় সত্য যে জন্মগ্রহণ করে তাকে একদিন না একদিন এই পৃথিবী মায়া ত্যাগ করে যেতে হবে। তবে মহান ব্যক্তিরা তাদের কর্মের দ্বারা চিরকালের জন্য অমর হয়ে যায় মানুষের মনের মধ্যে।

১৯০২ সালের ৪ জুলাই স্বামীর বয়স যখন প্রায় ৪০ বছর, তিনি তার নিয়মিত দৈনিক কাজকর্ম সম্পূর্ণ করে। এরপর তিনি বিকেল ৪ টার সময় তিনি তার যোগ আভাস ও শিষ্য দের বেদ, সংস্কৃতি ও যোগ সাধনার ব্যাপারে শিক্ষা দিয়ে।

তারপর সন্ধে ৭টা নাগাদ সেই বেকুরামকৃষ্ণ মঠের নিজের ঘরে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি নিজেকে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় রেখে পরলোক গমন করেন।

তাঁর কিছু বাণী আসুন ধ‍্যান ও অনুসরণ করি।

“সত্যের জন্য সব কিছুকে ত্যাগ করা চলে,
কিন্তু কোনো কিছুর জন্য সত্যকে ত্যাগ করা চলে না।“

 

“আমাদের প্রথম কর্তব্য হল নিজেকে ঘৃণা না করা।
উন্নত হইতে হইলে প্রথম নিজের উপর,
তারপরে ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস আবশ্যিক।
যাহার নিজের উপর বিশ্বাস নাই,
তাহার কখনই ঈশ্বরে বিশ্বাস আসিতে পারে না।”

 

স্বামীজি ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত একজন সমাজ সংস্কারক, তিনি তাঁর সমাজ সম্পর্কিত বাণী গুলোর মাধ্যমে আমাদের সমাজ সম্পর্কিত ধারণা কে প্রভাবিত করেছেন। তিনি বলেন 

 

“সমাজ অপরাধীদের কারণে খারাপ হয়না
বরং ভালো মানুষদের নীরবতার কারণে হয়”

 

রামকৃষ্ণ পরমহংসের প্রধান শিষ্য, স্বামী বিবেকানন্দ বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্ক স্থাপন এবং হিন্দুধর্মকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান ধর্ম হিসেবে প্রচার করেছিলেন। তিনি তাঁর ধর্ম সম্পর্কিত ধারণা কে প্ৰকাশ করার জন্য যে বাণী গুলো দিয়েছেন 

 

“সবচেয়ে বড় ধর্ম হল নিজের স্বভাবের প্রতি সত্য থাকা,
নিজের প্রতি বিশ্বাস করুন”

 

“মানুষের সেবাই হলো ভগবানের সেবা”

“যত বেশি আমরা বাইরে গিয়ে অন্যদের ভালো করবো,
আমাদের হৃদয় ততই বিশুদ্ধ হবে
এবং ভগবান সেখানে বাস করবেন”

 

“সেবা করো তাৎপরতার সাথে।
দান করো নির্লিপ্ত ভাবে।
ভালোবাসো নিঃস্বার্থভাবে।
ব্যয় করো বিবেচনার সাথে।
তর্ক করো যুক্তির সাথে।
কথা বলো সংক্ষেপে।

যদি তুমি অপর কে ঘৃণার চোখে দেখ তবে তোমার মনের বিষ তোমাকে নিজের চোখে ঘৃণার পাত্র করে তুলবে, আবার তুমি যদি অন্য কে ভালোবাস তবে তোমার জীবন ভালোবাসা ভরে উঠবে।

তুমি কিভাবে অনিষ্ট কারি কে খুজে পাবে যখন তোমার মনের মধ্যে অনিষ্ট কারি শক্তির বাস ? তুমি কিভাবে চোর কে চিহ্নিত করবে যখন তোমার মনের মধ্যে লোভ চোরের প্রবৃতি পরিপূর্ণ? সবার প্রথমে নিজের চরিত্র কে পরিবর্তণ কর তবেই জ্ঞানের এবং মুক্তি পাবে

 

এই প্রতিবেদনটি সসিয়াল মিডিয়ার বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সংগ্রহ করেছেন ফাদার সৌমিত্র মাখাল।

#RVApastoralcare #RadioVeritasAsia #BRBC#Banideepti #DailyGospel#SoumitraMakhal

নিয়মিত আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে আমাদের সাথেই থাকুন ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট ।

https://bengali.rvasia.org/

এছাড়াও সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের সাথে যুক্ত হতে ভিজিট করুন ।

Facebook: http://facebook.com/veritasbanglaYouTubehttp://youtube.com/veritasbanglaTwitterhttps://twitter.com/banglaveritasInstagramhttp://instagram.com/veritasbangla

 

 

Add new comment

10 + 0 =