সিলেট ক্যাথিড্রাল ধর্মপল্লীতে জুবিলীর পুণ্যবর্ষে অনুষ্ঠিত হলো ৩৯তম জাতীয় যুব দিবস

লক্ষ্মীপুর কুলাউরা ক্যাথিড্রাল অমলোদ্ভবা মারীয়া ধর্মপল্লীতে অনুষ্ঠিত হলো জাতীয় যুব দিবস

গত ২৩ থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সিলেট ধর্মপ্রদেশের লক্ষ্মীপুর কুলাউরা ক্যাথিড্রাল অমলোদ্ভবা মারীয়া ধর্মপল্লীতে জুবিলীর পুণ্যবর্ষে অনুষ্ঠিত হলো ৩৯তম জাতীয় যুব দিবস ।

এই জাতীয় যুব দিবসের মূলসুর ছিল, “আশায় আনন্দিত হও”। এতে বাংলাদেশের আটটি ধর্মপ্রদেশ থেকে প্রায় ৫০৮ জন যুবক-যুবতি, ৪৫জন যাজক এবং ৪০ জন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সিস্টারগণ এই যুব দিবসে অংশগ্রহণ করেন।

যুব গঠন, শিক্ষা ও সেবায় এপিসকপাল যুব কমিশনের গৌরবময় ২৫ বছরের জয়যাত্রার চেতনা, নবজাগরন ও নবায়নের প্রেরণা নিয়ে এবছর আরো নতুনত্ব, প্রাণবন্ত, প্রার্থনাপূর্ণ, ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসবমুখরভাবে কয়েকশত যুবক-যুবতীদের সমাগমে সিলেট ধর্মপ্রদেশের লক্ষীপুর ধর্মপল্লীতে উদযাপিত হলো এই জাতীয় যুব দিবস।

আন্তঃধর্মপ্রদেশীয় এই যুব তীর্থোৎসবে উপস্থিত ছিলেন, আর্চবিশপ সুব্রত লরেন্স হাওলাদার, বাংলাদেশে ভাটিকানের রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ কেভিন রাণ্ডাল, বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজ, সিলেট ধর্মপ্রদেশবিশপ জের্ভাস রোজারিও, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ, জনাব শফিউল আলম চৌধুরী, মাননীয় সংসদ সদস্য,  মৌলভীবাজার-২ আসন, জনাব মামুন রহমান, মাননীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার।

এছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন আহবায়ক, ফাদার বিকাশ জেমস রিবেরু, সিএসসি, নির্বাহী সচিব ও জাতীয় যুব সমন্বয়কারী, মি. বনিফাস খংলা, আঞ্চলিক পরিচালক, কারিতাস সিলেট, ফাদার সাগর রোজারিও, ওএমআই, পাল-পুরোহিত, ফাদার ব্রাইন চঞ্চল গমেজ, ভিকার জেনারেল, সিলেট ধর্মপদেশে এবং ফাদার মিন্টু পালমা, জুডিশিয়াল ভিকার, ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশ।

আহবায়ক, ফাদার বিকাশ জেমস রিবেরু, সিএসসি বলেন, “যুব দিবস একদিকে যেমন যুবা প্রাণের মিলন মঞ্চ ও বিশ্বাসের মহোৎসব,  অন্যদিকে তেমনি একটি আধ্যাত্মিক তীর্থযাত্রা। পুণ্য পিতা পোপ ফ্রান্সিস বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে যে, যুব দিবস কোন আতশবাজির প্রদর্শনী নয়,  উদ্দীপনার ঝলকানী নয় যার অস্তিত্ব ক্ষণস্থায়ী এবং নিজেদের মধ্যেই সীমিত, বরং এটি বিশ্বাস ও আশার তীর্থযাত্রা।”

বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন কৃষ্টি-সংস্কৃতির, পোশাষ-পরিচ্ছদের, পটভূমির ও ভাষার সমমনা যুবারা আজ একত্রে মিলিত হয়েছ। এই বিভিন্নতা আজকের মিলনের ক্ষেত্রে কোন বাঁধার সৃষ্টি করতে পারেনি বরং মিলনের সৌন্দর্য্য ও আনন্দ বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে” বলেন ফাদার বিকাশ।

ফাদার আরো বলেন, “যুব সম্প্রদায় বিশ্বাস এবং জীবনাহ্বানে নিজেকে খ্রিষ্টের চরণে সমর্পণ করে নিজের আধ্যাত্মিক জীবনে পরিপক্কতা লাভ করতে পারবে। তোমরা যে ঈশ্বরের, মণ্ডলীর এবং জগতের জন্যে অতি মূল্যবান উপহার সেটা অনুধাবন করতে পারবে।”

অংশগ্রহনকারী ম্যাগডেলিনা সরেন তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, “এই যুব তীর্থযাত্রায় ঈশ্বর এবং আমাদের ভাই ও বোনদের মুখোমুখি সাক্ষাতের আনন্দ নতুনভাবে অনুভব করতে সাহায্য করছে। এই উৎসবে যোগদান করতে পেরে আমি অনেক আনন্দিত।”

অংশগ্রহনকারী উদয় এিপুরা বলেন, “এই জাতীয় যুব দিবসে অংশগ্রহণ করে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমি এখান এসে যে শিক্ষা লাভ করেছি সেই শিক্ষা যুবা ভাই-বোনদের মাঝে বিলিয়ে দিতে সাহায্য করবো আমি সেই অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি।”

পুণ্যপিতা সাধু দ্বিতীয় জন পল ছিলেন একজন যুবপ্রেমিক। যুবদের ভালোবেসে তিনি বিশ্ব যুব দিবস সূচনা করেন। এরপর থেকেই বিভিন্ন দেশে জাতীয় ভাবে যুব দিবস পালন করা হচ্ছে।

তবে বাংলাদেশের ৮টি ধর্মপ্রদেশ থেকে আগত যুবক-যুবতীরা খ্রিস্টের সান্নিধ্যে নিজেদের জীবন গড়ে তুলবে প্রতিশ্রুতি দেন। যুবক-যুবতীদের কথার মধ্যে এই মনোভাবই ব্যক্ত হয়, অনেক সময় যুবক-যুবতীরা বিক্ষিপ্ত, পথভ্রান্ত ও সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে থাকেন তাই তাদের যত্ন নেওয়া মণ্ডলীর দায়িত্ব।

এই জাতীয় যুব দিবসের শিক্ষার দ্বারা আলোকিত হয়ে নিজ নিজ কার্যক্ষেত্রে খ্রিস্টের আলোকে প্রজ্জ্বলিত করবেন বলে যুবারা অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

পাঁচ দিনের এই অনুষ্ঠান সূচির মধ্যে ছিল, পবিএ খ্রিস্টযাগ, শুভেচ্ছা বক্তব্য, পতাকা উওোলন, বর্ণাঢ্য যুব র‌্যালী, যুব দিবসের থিম সং, প্রার্থনা অনুষ্ঠান, ক্রুশের পথ ও আরাধনা, পাপস্বীকার অনুষ্ঠান, বিভিন্ন বিষয়ের উপর ক্লাশ ও সহভাগিতা, এনিমেশন, আলোর উৎসব ও বন্ধুত্বের আনন্দ, মূলায়ন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

মাতা মণ্ডলী সর্বদাই যুবাদের আহ্বান করেন যেন পুনরুত্থিত যীশুর স্পর্শে যুবাদের হৃদয় মন উন্মুক্ত থাকে এবং যীশুর স্পর্শে যুবাদের ভেতরের প্রাণশক্তি,  স্বপ্ন,  উৎসাহ ও আশা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়ে উঠে। - আরভিএ সংবাদ