নাগরী ধর্মপল্লী পানজোরাতে অনুষ্ঠিত হলো মহান সাধু আন্তনীর তীর্থোৎসব

নাগরী ধর্মপল্লীর অধীনস্থ অনুষ্ঠিত হলো মহান সাধু আন্তনীর তীর্থোৎসব

গত ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,  প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যতায় অনুষ্ঠিত হলো নাগরী ধর্মপল্লীর অধীনস্থ পানজোরাতে মহান সাধু আন্তনীর তীর্থোৎসব।

নয় দিনব্যাপী নভেনা প্রার্থনা ও খ্রিস্টযাগ উৎসর্গের মধ্যদিয়ে খ্রিস্টভক্তদের আধ্যাত্নিক প্রস্তুতির পর উদযাপিত হয়েছে এই সাধু আন্তনীর তীর্থোৎসব। এতে বৃদ্ধ হতে শিশু পর্যন্ত মহান সাধু আন্তনীর বিপুল সংখ্যক দেশী-বিদেশী ভক্তরা তীর্থোৎসবে যোগ দিয়েছেন।

এই তীর্থোৎসবকে কেন্দ্র করে ২টি খ্রিস্টযাগ অনুষ্ঠিত হয়েছে যথাক্রমে সকাল ৭ টায় প্রথম খ্রিস্টযাগ এবং সকাল ১০টায় দ্বিতীয় খ্রিস্টযাগ। পবিএ খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন, ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ বিজয় এন. ডি’ক্রুশ, বাংলাদেশে ভাটিকানস্থ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ কেভিন রন্ডাল, বিশপ থিওটোনিয়ান সহ  বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত ফাদার, ব্রাদার, সিস্টার ও খ্রিস্টভক্তগন।

পবিএ খ্রিস্টযাগের উপদেশে বাংলাদেশে ভাটিকানস্থ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ কেভিন রন্ডাল বলেন, “সাধু আন্তনীর জীবনের মত আমাদের প্রতিটি খ্রিস্টভক্তদের জীবন হওয়া উচিত। আমাদের জীবন হওয়া উচিত, অন্তরে অদম্য সাহস, ভালোবাসা-ক্ষমার জীবন, ছোট বড় সংকট মোকাবেলা করার সাহসী জীবন, ঈশ্বরের উপার নির্ভরশীল হওয়ার জীবন।”

ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ বিজয় এন.ডি’ক্রুজ বলেন, “সাধু আন্তনীর যে প্রবল ইচ্ছা ছিল যীশুকে পাওয়ার জন্য, আমাদেরও উচিত সাধু আন্তনীর শিক্ষা অনুযায়ী জীবন যাপন করা তাহলে খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের জীবন পরিপূর্ণ হবে। আপনার এই মহান সাধুর মধ্যস্থতায় প্রার্থনা করে আপনাদের হ্নদয়ের ভক্তি ভালোবাসা আরো বাড়াবেন।”

এই তীর্থে অংশগ্রহনকারী সাধু আনন্তী ভক্ত মনের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, “আমি প্রতিবছর সাধু আন্তনীর তীর্থ করতে ছুটে আসি নাগরীর এই পানজোরা গ্রামে কারণ  সাধু আনন্তী আমার প্রিয় সাধু, তাই আমি আমার স্ব-পরিবার নিয়ে চলে আসি তাঁর প্রতি ভক্তি, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও প্রণাম জানাতে।”

বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় তীর্থস্থান হচ্ছে এই নাগরীর পানজোরাতে। ১৬৬৩ সাল থেকে এই পানজোরা গ্রামে সাধু আন্তনীর স্মরণে তীর্থোৎসব উদযাপন শুরু হয়েছে, যা আজও চলমান রয়েছে।

জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশ থেকেও হাজার হাজার সাধু আন্তনীর ভক্ত এই তীর্থোৎসবে যোগদান করে, প্রার্থনা করে, মানত রাখে এবং পূর্বের রেখে যাওয়া মানতের জন্য সাধু আন্তনীর মাধ্যমে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান।

সাধু আন্তনী হচ্ছেন সবার প্রিয় সাধু। তিনি ১৫ আগস্ট ১১৯৫ খ্রিস্টাব্দে, পর্তুগালের বর্তমান রাজধানী লিসবন শহরের জন্মগ্রহণ করেন। তার কর্মজীবন কাটে ইতালির পাদুয়ায়। মাত্র ৩৯ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরন করেন।

সাধু আনন্তী ছিলেন অত্যন্ত সহজ-সরল, ঈশ্বর ও মানবপ্রেমী, ধার্মিক এবং দয়ালু ও দরদী এক মহান সাধু। তিনি মানুষকে ঈশ্বরের দয়া লাভ করাতে সর্বদায় সাহায্য করেছেন। দরদী হৃদয় নিয়ে তিনি দরিদ্র ও পাপীদের নিকট ঈশ্বরের ঐশভালবাসা ও দয়ার কথা প্রচার ও প্রকাশ করেছেন।

বাংলাদেশে দিন দিন সাধু আন্তনী ভক্তের সংখ্যা বাড়ছে। আর তাঁর সাক্ষ্য মেলে এই গাজীপুর জেলার এই নাগরী পানজোড়া গ্রামে। খ্রিস্টভক্তদের বিশ্বাসে আরো বিশ্বাসী হতে সহায়তা করছে বিশ্বের জনপ্রিয় সাধু পাদুয়ার সাধু আন্তনী। - আরভিএ সংবাদ